Header Ads Widget

ট্রেন ড্রাইভার/রেল চালক

https://e-careerdesk.blogspot.com/


 SUB: LOCO PILOT

বিষয়: ট্রেন ড্রাইভার/রেল চালক

" LOCO" শব্দের নাম বাচক শব্দ যদি "বিকৃতমস্তিষ্ক" ধরি আর PILOT শব্দের অর্থ চালক বা ড্রাইভার। তাহলে আক্ষরিক অর্থে Loco Pilot বলতে বিকৃতমস্তিষ্কের চালক বোঝায়। কিন্তু আমরা Loco Pilot বলতে ট্রেন চালককেই বুঝি।

২৩ ফেব্রুয়ারি,২০২২ বিভিন্ন সোস‍্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়েছে একটি ভিডিও। ফেসবুকে লেখা, Whatsapp এ লেখা, পত্র পত্রিকায় লেখা ছড়িয়ে পড়েছে দেশ বিদেশে। সংবাদ শিরোনামে ফলাও হয়ে প্রকাশ পেয়েছে   " কচুরির লোভে ট্রেন থামিয়ে বিপাকে পাঁচ রেল কর্মী।"   ঘটনাটি কোন একজন প্রত‍্যক্ষদর্শী ক‍্যামেরা বন্ধী করে সোস‍্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দিয়েছেন আর রেলের সুরক্ষার দিকে প্রশ্নবান ছুড়ছেন অনেকেই। সঙ্গে সঙ্গে  রেলওয়ে উচ্চতর আধিকারিকদের তৎপরতায় দুজন লোকো পাইলট, দুজন গেট ম‍্যান এবং আরো একজন রেলকর্মীকে সাসপেন্ট করেছেন।

খবরের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন কমেন্ট এবং বিশেষত:  যে শিরোনাম থেকে আজ আমার এই লেখার অনুপ্রেরনা যুগিয়েছে সেটি হলো " কচুরির লোভে ট্রেন থামিয়ে বিপাকে পাঁচ কর্মী।" এবং শুরুতেই লেখা লোভে পাপ, পাপে মৃত‍্যু তবে এখানে কারোর মৃত‍্যু হয়নি, তবে কোপ পড়েছে চাকরিতে। নীচে লিঙ্কটি দেওয়া হলো।

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=5945048835510590&id=198230903525774&sfnsn=wiwspwa

ভিডিও👇

https://youtu.be/QWZ3ssYh5FU

ঘটনাটি ঘটেছে রাজস্থানের  আলোয়ারের জংশন থেকে ৫০০ মিটার আগে দাউদপুর রেলক্রসিং -এ।

খবরটি ছড়িয়ে পড়েছে, বিভিন্ন সংবাদ মাধ‍্যম তাদের লেখার কারসাজি দেখিয়েছে সোস‍্যাল মিডিয়ায়ও । কবি সাহিত‍্যিকদের অভাব নেই তারা তাদের লেখনীর মাধ‍্যমে তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন পক্ষে ও বিপক্ষে এটা তাদের বাক্ স্বাধীনতা। মতামত প্রকাশের অধিকার তাদের আছে, সংবিধান স্বীকৃত। ঘটনাটি যে রেলওয়ে আইনকানুন বিরুদ্ধ সে বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই কিন্তু মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে অনেক সময় বড়ধরনের অন‍্যায়কেও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা হয়। আমি সেই বিষয়টির মধ‍্যেও যাচ্ছি না।  যারা এমন কিছু কুরুচিপূর্ণ মন্তব‍্য করেছেন তাতে অপমান বা লজ্জাবোধ থেকেই এই লেখনী।

প্রথমত বলে রাখি Loco Pilot বা রেলওয়ে ড্রাইভার হতে গেলে রিকুটমেন্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কতকগুলি ধাপ পেরিয়ে তার পর Assistant Loco Pilot এর Trainee হিসাবে নিয়োগপত্র পাওয়া যায় এবং প্রতিটি ধাপই কঠিন সাধ‍্য সাধনা। বিশেষ করে Psychological Test সময়ের সঙ্গে প্রশ্নের সংখ‍্যা এবং Accuracy একটু বেশিই টাফ্। মেডিকেলও  A1  ক‍্যাটাগরির হয়ে থাকে।  নীম্নে একটি ভিডিও লিঙ্ক দেওয়া হলো স্বয়ংসম্পূর্ণ না হলেও মোটামুটি বোধগম‍্য করে দেখানো আছে। লিঙ্কটি হলো-

https://youtu.be/D3ruReMGwCI

শুধু যে Recruitment এর আগে তা নয়। চাকরি পাওয়ার পর বিভিন্ন সময় নিয়ম অনুযায়ী ক্ল‍াস, পড়াশুনা, পদন্নতির ক্ষেত্রে পরীক্ষায় পাশ করা বাধ‍্যতামূলক এবং শারীরিক ও মানসিভাবে উপযুক্ত হতে হবে।

একটি ইঞ্জিনে ইলেকট্রিক‍্যাল, মেকানিক‍্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স এর বিভিন্ন অংশ থাকে। একজন ড্রাইভারকে মোটামুটি সমস্ত অংশ সম্পর্কে  জ্ঞান রাখা বাধ‍্যতামূলক। বিভিন্ন ইঞ্জিনের ব্রেকপাওয়ার বিভিন্ন হয় যা অধিকাংশ সময় ট্রেনের লোডের উপর নির্ভর করে এছাড়া অন‍্যান‍্য ফ‍্যাক্টরগুলিও কাজ করে। সেই অনুযায়ী অনুমানের ভিত্তিতে ব্রেকিং করে নিদৃিষ্ট স্থানে গাড়ি দাড় করানোই একজন ড্রাইভারের প্রকৃত দক্ষতার পরিচয় দেয়। তাছাড়া আরো অন‍্যান‍্য আনুসঙ্গিক অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে।  প্রয়োজনের "অতিরিক্ত" বা "কম" কে আমরা অসুখ বলি। তাই একজন ট্রেন চালকের কাছে আইন কানুনের নিয়ম বিরুদ্ধ মানেই সেটাকে অ‍্যাক্সিডেন্ট বললে বোধ হয় ভূল হবে না। একজন মানুষ একটি নিদৃষ্ট বিষয় বা বস্তুর উপর ১৪ সেকেন্ডের বেশি সময় তার  মননিবেশ করতে পারে না। এই চঞ্চল মনের বিরুদ্ধে লড়াই করে চেষ্টা করা হয় কতোটা নিখুতভাবে মনের সঙ্গে শরীররের সংযোগ স্থাপন করে  সঠিক সময়ে নিরাপদে হাজার হাজার মানুষ এবং কোটি কোটি টাকার সরকারী সম্পদকে নিদৃষ্ট গন্তব‍্যে পৌঁছে দেওয়া যায়।  একজন দায়ীত্বশীল ড্রাইভারের কৃতিত্ত্ব এটাই। সেইজন‍্য রেলের তরফ থেকে বিভিন্ন সময় স্ত্রীদের ডেকে ফ‍্যামিলি কনফারেন্সের আয়োজন করা হয় তাদের আচার, আচরন, ব‍্যবহার কেমন হওয়া দরকার। কারন একজন ড্রাইভারের হাতে অনেকের জীবন ও বহু মূল‍্যের সম্পদ থাকে। তেমনি একটি কনফারেন্স ভিডিও লিঙ্ক দেওয়া হলো।--

https://youtu.be/o62u1Y2m0rQ

যে বাড়িতে পরিবারে অশান্তি খিটমিট লেগেই থাকে সে ক্ষেত্রে পরিনাম কি হতে পারে তার একটি নমুনা ভিডিও  লিঙ্কের মাধ‍্যমে দেওয়া হলো.....

https://youtu.be/wRzTnoZDor0

রেল চালকদের বলা হয় Running Staff  অধিকাংশ সময় একবার ডিউটিতে বেরোলে বাড়ি ফিরতে হয় একদিন, দেড়দিন বা দু'দিন পরে। ইমাজেন্সি ডিউটি থাকে নিদৃষ্ট সময় থাকে না। রাত বা দিন, সকাল বা সন্ধ‍্যা। নিদৃষ্ট কোন ছুটি নেই শনিবার বা রবিবারের কোন গল্প নেই। ন‍্যাশানাল হোলি ডে আছে কিন্তু আপনার ছুটি মিলবে কি মিলবে না সেটা নির্ভর করে personnel দের প্রয়োজনীয় সংখ‍্যার উপর ভিত্তি করে কিন্তু ছুটি পেতে আপনি বাধ‍্য নয়। পুজো,পার্বন,আচার অনুষ্ঠানে হলেই যে আপনি ছুটি পাবেন তার কোন নিশ্চয়তা নেই। বিভিন্ন পূজো বা অনুষ্ঠানে   সময় ছুটি না দেওয়ার নিদৃষ্ট কিছু নিয়ম বিধি বেধে দেওয়া হয় তার থেকে বরং ডিউটি করাই শ্রেয়।

https://www.facebook.com/100003299175857/posts/4677896612330265/

বিভিন্ন প্রকারের সিগন‍্যাল ও তাদের আলাদা আলাদা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, রেলের নিয়মকানুন, আইন,শাস্তি, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের চাপ সময়, ম‍্যানেজমেন্ট, প্রকৃতির নিয়মের  বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করা যেমন ঘুম পেলেও ঘুমোনো যাবে না। প্রচন্ড গরমে যখন 70'C হলেও  ইঞ্জিনকে শীতল করে এগিয়ে চলতে হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য মানুষের ত্বকের সহ‍্য ক্ষমতা মোটামোটি 37'C সেখানে এতো বেশি গরমের মধ‍্যে সঠিক সময় ট্রেন চালিয়ে গন্তব‍্যে পৌঁছনো তার শরীরের উপর কতটা ধকল যায় সেই বোঝে যে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত । প্রায় 90% বা তার বেশি  ইঞ্জিনে থাকে না AC এর ব‍্যবস্থা, ইঞ্জিনে নেই কোন টয়লেট। সময়ের তাগিদে আর বাতরুমের চাপে তাড়াতাড়ি ক্রিয়াকর্ম সারতে গেলেই ক‍্যামেরা বন্ধি করে ভাইরাল করে দেয়। যান্ত্রিক ত্রুটি, প্রাকৃতিক কারন বা অন‍্যান‍্য কারনে ট্রেন একটু দেরী হলেই ড্রাইভারকে শুনতে হয় অকথ‍্য ভাষায় গালিগালাজ, পাথর ছোড়া হয়। শুনতে হয় এই ড্রাইভার বুড়ো,  ঐ ড্রাইভার ভালো বলে আজ সঠিক সময় পৌঁছেছে, অমুক ড্রাভারের বৌয়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে এমন সাত সতেরো মন্তব‍্যের শেষ থাকে না। শীত,গৃষ্ম, বর্ষা কোনটাকেই বাধা হিসাবে মেনে নেওয়া যাবে না। প্রচন্ড কুয়াশায় যখন কিচ্ছু দেখা যায় না তখনও খুব সতর্কতার সঙ্গে এবং নিদৃষ্ট রুলস মেনে চালিয়ে নিতে হবে এখানে কোন ব‍্যতিক্রম বলে কিছু নেই। নির্দিষ্ট সময়সূচী বলে তেমন কিছু নেই যা আছে তা হয়তো নিয়ম নীতিতে থাকতে পারে ব‍্যবহারিক ক্ষেত্রে অনেকটাই ব‍্যতিক্রম কারন জীবনে একটানা 19.5 ঘন্টার ডিউটি করার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। সব কিছু মিলিয়ে দেশের সৈনিকের থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই।

প্রধানত , খাওয়া দাওয়া , ঘুমের কোন নিদৃষ্ট সময় সূচী নেই। এই অনিয়মে শরীরে অল্প বয়স থেকেই বাসা বা‌‌ধতে শুরু করে  নানান রোগ যেমন- চোখের সমস্যা, সুগার, প্রেসার, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড, স্পন্ডলাইসিস, কোমর ব্যাথা, মেরুদন্ডের ব্যাথা ইত্যাদি।

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের বিপদ সংকুল পরিস্তিতির মুখোমুখি হতে হয় ভয়কে জয় করেই সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে হয়। এক সেকেন্ডের ভূল মানে ক্ষমার অযোগ‍্য। যা অত‍্যন্ত মারাত্মক এবং ধংসাত্মক হতে পারে যা কল্পনাতীত। ডিউটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি সময়ই মহা মূল‍্যবান চাকরি থাকবে কি থাকবে না, নিজের প্রান নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবেন কি পারবেন না তার নিশ্চয়তা নেই। অবশ‍্য একথাও ঠিক কারোর জীবনেই নিশ্চয়তা নেই শুধু সম্ভবনার নিরীখে আমার এই বক্তব‍্য। তেমনি কিছু ভিডিও লিঙ্ক সেয়ার করলাম

https://fb.watch/bqACQQ6i9C/

https://youtu.be/fiy3bjwNwik

নিরাপদে মানুষকে এক স্থান থেকে অন‍্য স্থানে  পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম সেরা মাধ‍্যম হল রেল। তাই সামান‍্যতম কারনে আমরা প্রতিবাদের মাধ‍্যম হিসাবে রেলকেই বেছে নিই এবং ভাংচুর চালাই, প্রতিহিংসা বসত ট্রেন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিই।  আমরা ভুলেই যাই আমরাই আমাদের সম্পদকে নষ্ট করছি, দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছি।

https://youtu.be/rSUf8yxYS8k

🖕

তবুও আমাদের ট্রেন চলছে চলবে। শুধু একটু মানুষের বিচার বোধশক্তির আপ টু ডেট করতে হবে।

জয় হিন্দ,ভারত মাতার জয়।।

ভারতীয় রেল জিন্দাবাদ।।

বি. দ্র: অনিচ্ছাকৃত ভূলত্রুটি মার্জনীয়।

© Kartik Chandra Dutta 




     About Us                         Contact Us                   Privacy Policy                    Terms Conditions


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ