রেলওয়ের ইঞ্জিন/ দুটিই চকচকে নতুন, ৩০১১ সিরিজ ট্র্যাকে ফিরতেই বিকল আরেকটি
দুই হাজার দুই’শ হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিন। এ ইঞ্জিন রেলের বহরে যুক্ত হলে দেখা যাবে গতির নতুন ঝড়,আধুনিক সুযোগ সুবিধা তো আছেই— যাত্রীদের ঠিক এমন গল্প শুনিয়ে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের বহরে যুক্ত হয়েছিল হুন্দাই রোটেম কোম্পানির (এইচআরসি) ২০টি ইঞ্জিন। কিন্তু ট্র্যাকে নেমে গতি তো দূরের কথা, বরং দেখা গেল দুর্গতি। যাত্রা পথে এসব ইঞ্জিন একের পর এক যুক্ত হচ্ছে বিকলের খাতায়। এতে রেল যাত্রায় বাড়ছে ভোগান্তি।
সবশেষ মঙ্গলবার বিকেলে (১ মার্চ) ৩০১৬ সিরিয়ালের ইঞ্জিনটি নষ্ট হয়ে পড়েছে পূর্বাঞ্চল রেলপথের লাকসাম রেলস্টেশনে। সকালে বিলাসবহুল সুবর্ণ এক্সপ্রেসকে নিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে রওনা দিয়েছিল ইঞ্জিনটি। এরপর রাত ৮টার দিকে লাকসাম এসে সেটি বিকল হয়ে পড়ে। প্রায় এক ঘন্টা পরে রাত ৮টা ৫০ মিনিটে নতুন ইঞ্জিন বদলে দিয়ে ট্রেনটি ২৯২২ সিরিজের ইঞ্জিন নিয়ে সুবর্ণ এক্সপ্রেস চট্টগ্রামের দিকে রওনা দেয়। এতে করে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
সুবর্ণ এক্সপ্রেসে ইঞ্জিন বিকল হয়ে দুর্ভোগের চিত্র নতুন নয়। এর আগে গত শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসার পথে বিকল হয়ে পড়ে ৩০১১ সিরিজের ইঞ্জিনটি। পরে ট্রেনটি সেখান থেকে ২৬০৩ সিরিজের নতুন ইঞ্জিন দিয়ে চট্টগ্রামের পথে রওনা দেয়। ট্রেনটি চট্টগ্রামে রাত ১০টার দিকে প্রবেশের কথা থাকলেও তা চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে প্রবেশ করে রাত ১টা ৫ মিনিটে। দুর্ভোগের মাত্রা ছাড়িয়ে যায় যাত্রীদের। এদিকে মঙ্গলবার ফের ৩০১৬ সিরিজের ইঞ্জিনটি লাকসামের বিকল হয়ে পড়ার বিষয়টি সিভয়েসকে নিশ্চিত করেছে রেলওয়ের দায়িত্বশীলরা।
রেলওয়ে কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকল হয়ে পড়া ৩০১১ সিরিজের ইঞ্জনটি মেরামত শেষে ট্র্যাকে ফিরে চারদিন পর অর্থ্যাৎ এক মার্চ। কিন্তু এ ইঞ্জিনটি ট্র্যাকে ফিরতেই যাত্রাপথে বিকল হয়ে পড়েছে ২০১৬ সিরিজের ইঞ্জিনটি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রেলওয়ে যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগ ও কোরিয়ান একটি প্রতিনিধি দল ৩০১৬ সিরিজের ইঞ্জিনের সমস্যা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিষয়টি জানতে চেয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ডিএমই) ওয়াহিদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকল হয়ে পড়া ইঞ্জিনটি কি সমস্যা হয়েছে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।’
চলাচল শুরুর এক বছরের মাথায় একের পর এক ইঞ্জিনগুলো কেন নষ্ট হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন ইঞ্জিন আনার পর তা মেইনটেনেন্সে এখনও অভ্যস্ত হয়ে উঠে নি আমাদের লোকোমাস্টার, সহকারি লোকোমাস্টাররা। এটা একটা সমস্যা হতে পারে।’
দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, ইঞ্জিনগুলো কেনার সময় চুক্তি অনুযায়ী ইঞ্জিন সরবরাহ হয়নি। রেলওয়েতে কর্মরতদের যোগসাজেশেই নিন্মমানের ইঞ্জিন সবরাহ করা হয়েছে। ২ হাজার ২০০ হর্সপাওয়ার এই ইঞ্জিন ১০টি চালাতে প্রতিটির জন্য ৩ হাজার ২০০ কিলো ভোল্ট এম্পিয়ার (কিভিএ) ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর ক্রয়ের চুক্তি হয়। কিন্তু ৩ হাজার ২০০ কেভিএ-এর দামেই কেনা হয়েছে ২ হাজার ২০০ কেভিএ জেনারেটর। যা দিয়ে লোকোমোটিভের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন ইঞ্জিনগুলোর হর্সপাওয়ার ২২শ’কি না তা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন।
জানা গেছে, নতুন আমদানি করা ইঞ্জিনগুলো ২২০০ হর্স পাওয়ারের। যা ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে সক্ষম। কিন্তু প্রথম থেকেই রেলওয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে অবকাঠামো সমস্যার কারণে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিতে নতুন ইঞ্জিনগুলো চলাচল করছে। যার মধ্যে প্রথম চালানে আসা ইঞ্জিনের সিরিজ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০১ থেকে ৩০১০ পর্যন্ত। পরে চালানে ইঞ্জিনের সিরিয়াল ৩০১১ থেকে ৩০২০।
এর আগে গেল বছর ৯ জুন দক্ষিণ কোরিয়া থেকে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছায় দ্বিতীয় চালানের ১০টি ইঞ্জিন। পরে ১২ জুন ৩০১৭ সিরিজের ইঞ্জিন প্রথমবারের লোড ট্রায়ালে নামে। এর অল্প কিছুদিন পরেই ইঞ্জিনগুলো যুক্ত হয় রেলের বহরে। কিন্তু একের পর এক ইঞ্জিন বিকলের ঘটনায় যাত্রী ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।
-সিভয়েস/এপি
ছবি - সিফাত তালহা
About Us
Contact Us
Privacy Policy
Terms Conditions
0 মন্তব্যসমূহ