Header Ads Widget

১৭ বছর ধরে মাটির গর্তে বসবাস

https://e-careerdesk.blogspot.com/


১৭ বছর ধরে মাটির গর্তে বসবাস


মাটি খুঁড়ে গর্ত করে সেই গর্তে ১৭ বছর ধরে বসবাস করছেন গৃহহীন রুহুল আমিন ও রেহেনা দম্পতি। শীতসহ ঝড়-বৃষ্টি সবই তাদের সইতে হয় নিদারুণ কষ্টে। দীর্ঘ ২৫ বছরের সংসার জীবনে একটি ছোট্ট ঘর তুলতে পারেননি টাকার অভাবে। রুহুল আমিনের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের দিঘরিয়া গ্রামের সরদার পাড়ায়। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়ার আশায় আবেদন করেছিলেন এই দম্পতি। কিন্তু সেই আবেদন আমলেই নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মো. রুহুল আমিন ও মোছা. রেহেনা খাতুন বলেন, ১৯৯৭ সালে তারা বিয়ে করেন। দিঘরিয়া দিয়ার পাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে ঘরজামাই থেকেছেন পাঁচ বছর। তিন বছর থেকেছেন দিঘরিয়া সরদার পাড়ায় মামার বাড়িতে। কিন্তু মামাতো ভাইয়ের বিয়ের পর বাধ্য হয়ে ঘর খালি করে দিতে হয়। এরপর চলে আসেন পৈত্রিক ভিটায়। সেখানে সামান্য জায়গা ছিল। সেই জায়গাতেই গর্ত করে রয়েছেন প্রায় ১৭ বছর। তারা আরো বলেন, মাটির গর্তের মধ্যে থাকতে অনেক সমস্যা হয়। বিশেষ করে বৃষ্টির সময় গর্তের ভেতর ও চারপাশ স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে থাকে। মাটির ভেতর থেকে পোকা-মাকড় বেরিয়ে পড়ে। জীবনযাপনের জন্য যে দু-চারটি আসবাবপত্র রয়েছে সেসব নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া শীতে ভিষণ কষ্ট হয়। আমাদের মাথার ওপর ছাদ নেই। শীত নিবারণের তেমন গরম কাপড়ও নেই। এসব কথা বলার সময় কেঁদে ফেলেন রেহেনা খাতুন। তিনি বলেন, সংসারের চিন্তায় তার স্বামী রুহুল আমিনের অসুখ বিসুখ লেগেই থাকে। এরপরও দিনমজুরি করেন। কিন্তু একজনের রোজগারের টাকায় পাঁচ জনের সংসার চালানো অসম্ভব। অভাবের তাড়নায় মেজ মেয়ে মীমকে মাত্র এক সপ্তাহ বয়সে দত্তক দিয়েছি। বড় মেয়ে বিলকিছ খাতুনকে সতিনের সংসারে বিয়ে দিয়েছি। জামাই ও মেয়েকে বাড়ি আনতে পারছি না ঘর না থাকার জন্য। তিনি বলেন, ছোট মেয়ে মিতু পড়ালেখায় ভালো। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে বারুহাস উচ্চ বিদ্যালয়ে। সমাজের বিত্তবানদের মধ্যে কেউ মেয়েটার পড়ালেখার ব্যয়ভার বহন করার দায়িত্ব নিলে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারত। সরেজমিনে দেখা যায়, মাটি খুঁড়ে ঘর বানিয়ে সেই ঘরের মধ্যে রয়েছেন রুহুল আমিন, তার স্ত্রী রেহেনা খাতুন ও মেয়ে মিতু খাতুন। গর্তের ঘরের ওপরে ত্রিপল দিয়ে রেখেছেন। সেই ত্রিপল বাঁশ ও ইটের সমন্বয়ে চাপ দিয়ে রাখা হয়েছে। কনকনে ঠান্ডা বাতাস থেকে বাঁচতে গর্তের পাশে ত্রিপল দিয়েই বেড়া দেওয়া হয়েছে। উঠানের তুলনায় গর্তের চারপাশ মাটি দিয়ে উঁচু করা। গর্তের মধ্যে রয়েছে একটি শোওয়ার চৌকি, নামাজের জন্য নির্ধারিত একটি ছোট চৌকি ও একটি বাক্স। দিঘরিয়া সরদার পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা ও সলঙ্গা ডিগ্রি কলেজের সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রভাষক আলাল উদ্দিন বলেন, রুহুল আমিন ও রেহেনা খুব অসহায় এক দম্পতি। তাদের কোনো ঘর নেই। এরা প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেলে গোটা দিঘরিয়া গ্রামবাসী খুশি হত। দিঘরিয়া ২ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত গ্রাম পুলিশ সুদেব কুমার বলেন, রুহুল আমিন ও রেহেনা দম্পতি এবং মোজাম্মেল হক ও মমেনা দম্পতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেতে নিয়ম অনুযায়ী ফরম পূরণ করে ইউএনও অফিসে জমা দিয়েছিলাম। তাড়াশ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. নূর মামুন বলেন, ভুক্তভোগী রুহুল আমিন ও রেহেনা দম্পতি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়ার জরিপ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবাউল করিম বলেন, সরেজমিনে দেখে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ